Wednesday 4 January 2012

কম্পিউটার কেনার সময় যেটা মাথায় রাখবেন

অনেকেই কম্পিউটার ব্যবহার করছেন বাংলাদেশে। আরও অনেকেই নিত্য নতুন আসছেন কম্পিউটারজনিত পেশায়। কিনছেন কম্পিউটার। আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় সেটাই। কম্পিউটার কেনার সময় যে সমস্যাটা সাধারণের মনে জাগে তা হচ্ছেÑকি কিনব এবং কোথা থেকে কিনব! কিন্তু প্রথম সমস্যাটা হওয়া উচিত ‘কেন কিনব’। যদি আপনি জানেন আপনি কেন কম্পিউটারটি কিনছেন, তবে কি কিনবেন সেটা নির্ধারণ করা কঠিন হবে না।
কেন কিনবেন! বিষয়টা সত্যিই জরুরী। আপনার একটি অফিস আছে যেখানে চিঠিপত্র কম্পোজ অথবা সাধারণ হিসেবে-নিকেশ-এর জন্য একটি কম্পিউটার দরকার। অথবা আপনি একটি পাবলিকেশন্স-এর জন্য কম্পিউটার কিনবেন। কিংবা আপনার বাসার টেলিভিশন নষ্ট হয়ে গেছে। চাচ্ছেন কম্পিউটার দিয়েই কাজ চালাতে। অথবা আপনার ছেলে সারা পাড়াময় খেলে বেড়ায়। তাকে ঘরে ধরে রাখতে আকর্ষণীয় কিছু গেমস-এর জন্য কম্পিউটার দরকার; আশা করছেন খেলতে খেলতেই একদিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে সে। অর্থাৎ. আপনার চাহিদা যাই হোক না কেন সেই অনুযায়ীই হওয়া উচিত আপনার কম্পিউটারটি। কম হলে তো কাজই চলবে না আর বেশি হলেও মিছেমিছি বাড়তি টাকা খরচ।
কম্পিউটারের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় যে পার্টস বা যন্ত্রাংশগুলো লাগে তা হচ্ছেÑ
১. মাদার বোর্ড বা মেইন বোর্ড।
২. প্রসেসর।
৩. র‌্যাম।
৪. হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ।
৫. কেসিং।
৬. মনিটর।
৭. এ.জি.পি. বা ভি.জি.এ কার্ড।
৮. কী বোর্ড।
৯. মাউস।
১০. ফপি ডিস্ক ড্রাইভ/সিডি রম ড্রাইভ (অপশনাল) হলে ভাল না হলেও চলে।
এছাড়াও গান বাজনা শুনতে হলে ‘সাউন্ড কার্ড’, স্পীকার, টেলিভিশন দেখতে হলে ‘টিভি কার্ড’, ভিডিও এডিটিং করতে হলে ‘ক্যাপচারিং কার্ড’ ইত্যাদি আরও নানা ধরনের পার্টস পাওয়া যায় যার ভিতর। কোনটা কোনটা ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করছে আপনার ওই ‘কেন কিনছেন’-এর উত্তরের উপর।
কেনার সময় মনে রাখবেন:
(১) এক্সপ্যানডিবিলিটি: যদি আপনি বর্তমানে একটি ৩০০ বা ৪০০ মেগাহার্টজ-এর প্রসেসরও কেনেন, অন্তত মাদার বোর্ডটা এমন নিন যাতে ওই গ্র“পের প্রসেসরের শেষ ধাপ পর্যন্ত (যা এখন পর্যন্ত বের হয়েছে) সাপোর্ট করে। যাতে প্রয়োজনে আপনি শুধুমাত্র প্রসেসর পাল্টিয়েই কাজ চালাতে পারেন।
(২) ওয়ারেন্টি: কী-বোর্ড, মাউস, স্পীকার এবং কেসিং মোটামুটিভাবে এগুলো বাদে আর সব কিছুরই ওয়ারেন্টি রয়েছে। ধরুন হার্ডডিস্কের েেত্রÑআজ থেকে বছরখানেক আগে বেরিয়েছে ২০ গিগাবাইটস্-এর হার্ড ডিস্ক এবং ৩/৪মাস আগে বেরিয়েছে ৩০ এবং ৪০ গিগাবাইটস্-এর। বড়গুলো বের হওয়ার ফলে এবং ছোটগুলোর প্রডাকশন কমে যাওয়ার ফলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ২০ গিগাবাইটস্ আর পাওয়া যাবে না। সেেেত্র আপনি যদি এখন একটি ২০ গিগা হার্ডডিস্ক কেনেন এবং ছয় সাত মাস পরে তার ওয়ারেন্টির প্রয়োজন পড়ে তবে বেশিরভাগ সম্ভাবনা আরও কিছু টাকা দিয়ে নতুনটা নিতে হবে কারণ সেটা সাইজে বড়। তবে এেেত্র মনে রাখবেন লাভটা যেভাবেই হোক বিক্রেতারই হয়।
তবে যে সব পার্টস সাধারণত হাজারে দু’একটা নষ্ট হয় সেগুলোতে জরংশ নেয়া উচিত। কারণ তাতেই লাভবান হওয়া যায়। যেমনÑপ্রসেসর। আপনি চিঠিপত্র কম্পোজের জন্য পেন্টিয়াম ফোর কিনলে তা হবে অপচয়েরই নামান্তর। সর্বনিম্ন যা পাওয়া সম্ভব সেটাই নিয়ে নিন।
(৩) আপনি যে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করবেন সেগুলোর ন্যূনতম হার্ডওয়্যার রিকুয়াইআরমেন্ট কি তা জেনে নিন। অনেক সফটওয়্যারই (গেমস্ সহ) সব কম্পিউটারে চলে না।
(৪) কম্পিউটার কেনার েেত্র বাঙালী এখনও যেমন করেই হোক একজন আত্মীয় খুঁজে বের করে যিনি এ ব্যবসাতে সম্পৃক্ত অথবা কম্পিউটার বোঝেন। তারপরেও বলব, ব্যক্তিগতভাবে অনেকে কম্পিউটার পার্টস কিনে অ্যাসেমব্লিং করে নেন। সেটা যদি নিজেরটা নিজে হয় তবে সমস্যা নেই। কিন্তু পরিচিত কাউকে দিয়ে কাজটা করানোর সময় মনে রাখবেন যে আপনার মেশিন সমস্যা শুরু করলে সেই সময় তাকে হাতের কাছে নাও পেতে পারেন। কিন্তু যদি কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কেনেন তবে তাকে পাশে পাবেন যে কোন সময়ই। আর হ্যাঁ চেষ্টা করুন যে প্রতিষ্ঠানটি অন্তত এক বছর পার করেছে তার কাছ থেকে কিনতে। আমি বলছি না যে নতুনরা খারাপ। আর তাদের কাছ থেকে না কিনলে তারাই বা চলবে কেমন করে, কিন্তু তারপরও প্রতিযোগিতার মার্কেটে টিকতে পারে না অনেকেই। সেেেত্র সমস্যাটা আমাদের অর্থাৎ ক্রেতাদেরই হয়। তাই দেখে শুনে প্রতিষ্ঠানটি বাছুন।
(৫) বিশ্বাস রাখুন: যার কাছ থেকেই কিনুন না কেন বিশ্বাস রাখুন তার উপর। খোলাখুলি বলুন আপনার চাহিদা এবং সীমাবদ্ধতা। মুক্তদৃষ্টিতে দেখুন তার পরামর্শ। সেই বিক্রেতা বা প্রতিষ্ঠান তার ব্যবসার স্বার্থেই সাহায্য করবে আপনাকে তার অভিজ্ঞতার আলোকে। মনে রাখবেন খিট্-খিট্ করা বিক্রেতা বা ক্রেতা কাউকেই কেউ পছন্দ করে না। আর তখনই দেখা দেয় সমস্যা।
(৬) ঢাকায় কম্পিউটার বলতে সবাই বোঝে এলিফ্যান্ট রোড অথবা আই.ডি.বি.-কে। খুঁজে দেখুন আপনার এলাকাতেও হয়তো বা বাড়ির পাশেই আছে কোন কম্পিউটার বিক্রেতা। কাছাকাছি থেকে কেনার সুবিধে ভোগ করবেন আপনিই। আর ঢাকার বাইরে যারা থাকেন, যদি ৫০০/১০০০ টাকা বেশিও দিতে হয় ঢাকার চেয়ে (কারণ সেই বিক্রেতাদেরকে ঢাকা থেকে কিনে নিয়ে যেতে হয়) তবুও নিজের এলাকা থেকেই বেছে নিন কোনও প্রতিষ্ঠানকে। নইলে কম্পিউটারে ভাইরাস ধরলেও দৌড়াতে হবে ঢাকায়।

No comments:

Post a Comment