Saturday 23 March 2013

ওয়াই-ফাই চালানোর নিরাপদ উপায়

ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ডিভাইসের দখল নিতে অথবা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে হ্যাকাররা অহরহ ব্যবহার করছে ওয়াই-ফাই সংযোগ। এমন অবস্থায় ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে নিজের ডিভাইস আর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কয়েকটি উপায় বাতলে দিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট টেক নিউজ ডেইলি।

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে বাড়ছে ওয়াই-ফাই-এর ব্যবহার। একই সঙ্গে বাড়ছে হ্যাকার তথা সাইবার অপরাধীদের দৌরাত্ব। ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ডিভাইসের দখল নিতে অথবা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে হ্যাকাররা অহরহ ব্যবহার করছে ওয়াই-ফাই সংযোগ। এমন অবস্থায় ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে নিজের ডিভাইস আর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কয়েকটি উপায় বাতলে দিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট টেক নিউজ ডেইলি।
বিরত থাকুন শেয়ারিং থেকে
মিউজিক লাইব্রেরি, প্রিন্টার্স, ফাইলস ইত্যাদি পাবলিক ওয়াই-ফাই জোনে শেয়ার না করাই ভালো। উইন্ডোজ পিসির ক্ষেত্রে অ্যাডভান্সড শেয়ারিং সেটিংস থেকে ওয়াই-ফাই শেয়ারিং বন্ধ করা যায়। ম্যাক পিসির ক্ষেত্রে সিস্টেম প্রেফারেন্স থেকে শেয়ারিং বন্ধ করা যায়। শেয়ারিং চালু করার জন্য উইন্ডোজ পিসিতে অ্যাডভান্সড শেয়ারিং সেটিংস থেকে কন্ট্রোল প্যানেলের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেটিংসের হোমগ্রুপ ওপেন করতে হবে যার ফলে কম্পিউটারের ফাইল ও প্রিন্টার শেয়ারিং একই নেটওয়ার্ক ব্যবহারীর কাছে দৃশ্যমান হবে। ম্যাক পিসির ক্ষেত্রে সিস্টেম প্রেফারেন্স থেকে শেয়ারিং সিলেক্ট করতে হবে।
বন্ধ রাখুন স্বয়ংক্রিয় ওয়াই-ফাই সংযোগ
স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয় ওয়াই-ফাই সংযোগ চালু থাকলে ব্যবহারকারীরর অজান্তেই ডিভাইসটি সংযোগ পেয়ে যেতে পারে বিভিন্ন পাবলিক ওয়াই-ফাই সিস্টেমে। এতে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস সংক্রমণের আশংকা বেড়ে যায় অনেকটাই। এমনকি ব্যবহারকারীরর অজান্তেই পুরো ডিভাইসের দখল নিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা। এক্ষেত্রে নিজের ডিভাইস আর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদিতে স্বয়ংক্রিয় ওয়াই-ফাই সংযোগটি বন্ধ রাখাই নিরাপদ।
অধিকাংশ আধুনিক স্মার্টফোনে এ অপশনটি বন্ধ থাকে। যেসব ওয়াই-ফাই ডিভাইসে এটি থাকে না, সেসব ডিভাইসের ওয়াই-ফাই সেটিং থেকে অটো-কানেক্টিং বন্ধ করা যায়। যদি সেটিং অ্যাপে ওয়াই-ফাই বন্ধ করার কোনো অপশন না থাকে তবে এর মানে হচ্ছে  আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে ওয়াই-ফাই স্বয়ংক্রিয় সংযোগ।
এইচটিটিপিএস ব্যবহার করুন
বেশিরভাগ ওয়েবসাইট ডেটা ট্রান্সফার করে একেবারেই সোজা টেক্সট হিসেবে। এর ফলে কেউ যদি ব্যবহারকারীরর নেটওয়ার্ক সংযোগটি হ্যাক করতে সমর্থ হয়, তবে ওয়েবসাইটের টেক্সট ব্যবহার করেই তথ্য চুরি করতে এবং ডিভাইসটির ক্ষতি করতে পারবে হ্যাকার। কিছু ওয়েবসাইট ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এইচটিটিপিএস এক্সটেনশন ব্যবহার করে ডেটা এনক্রিপ্ট করে ট্রান্সফার করে। এইচটিটিপিএস প্লাগ-ইন ব্যবহার করে এই কাজটি ব্যবহারকারী নিজেও করতে পারেন। এইচটিটিপিএস এক্সটেনশন ব্যবহার করলে আপনার ইন্টারনেট সংযোগ হ্যাক হলেও  নিরাপদ থাকবে আপনার ব্যক্তিগত ডেটা।
দ্বৈত অথেনটিকেশন
টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দ্বৈত অথেনটিকেশন মানে যে কোনো অ্যাকাউন্টে ঢুকতে দু’টি ভিন্ন উপায় ব্যবহার করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এর একটি হতে পারে যা ব্যবহারকারীর কাছেই আছে, যেমন পাসওয়ার্ড। আর দ্বিতীয়টি হতে পারে এসএমএসের মাধ্যমে সেল ফোনে পাঠানো একটি গোপন কোড।
এই ব্যবস্থার সুবিধাটি হচ্ছে, হ্যাকার যদি ওয়াই-ফাই সংযোগ করে আপনার পাসওয়ার্ডটি চুরি করতেও পারে, তারপরেও মোবাইল কোডটির অভাবে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না আপনার অ্যাকাউন্টে। জিমেইলে দুই ধাপের অথেনটিকেশন সুবিধা পেতে জিমেইল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে যেতে হবে সেটিংস অপশনে। সেখান থেকে ‘আদার গুগল অ্যাকাউন্ট সেটিংস’- থেকে চালু করা যাবে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সুবিধা।
নিজের ফোন নাম্বারটি দিতে হবে গুগলকে, আর ঠিক করতে হবে লগ-ইন করার সময় আপনি গুগলের কাছ থেকে টেক্সট মেসেজ চান নাকি ফোন কল। এরপর গুগল আপনার মোবাইলে পাঠিয়ে দেবে ছয় ডিজিটের একটি কোড। কোডটি চাপলেই চালু হয়ে যাবে আপনার অ্যাকাউন্টের টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন। এরপর প্রতিবার নতুন কোনো কম্পিউটার থেকে গুগল অ্যাকাউন্টে ঢুকতে গেলেই পাসওয়ার্ড এবং গোপন কোড দু’টি ব্যবহার করেই নিশ্চিত করতে হবে আপনার পরিচয়।
এড়িয়ে চলুন অপরিচিত ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক
অপরিচিত কোনো ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হোন ওয়াই-ফাই সংযোগটি নিরাপদ কিনা। হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের ডিভাইস দখলের উদ্দেশ্যে সহজেই চালু করতে পারে ভুয়া নামের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক। এসব ক্ষেত্রে অপরিচিত নামের ওয়াই-ফাই সংযোগ এড়িয়ে চলাটাই নিরাপদ। অপরিচিত কোনো ওয়াই-ফাই জোনে থাকলে ব্যবহারের আগে দায়িত্ববান কাউকে জিজ্ঞেস করে নিন সংযোগটির ব্যাপারে।
ব্যবহার করুন পাসওয়ার্ড ম্যানেজারএকই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করলে পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়ে বেহাত হতে পারে সবগুলো অ্যাকাউন্টই। এজন্য আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যবহার করুন আলাদা পাসওয়ার্ড। একাধিক পাসওয়ার্ড মনে রাখা একটু ঝামেলার মনে হতেই পারে। এ জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে কিপাস, বা লাস্টপাস-এর মতো বিনামূল্যের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। কিপাস ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে একটি এসক্রিপ্টেড ডেটাবেইস ফাইল রাখে, আর লাস্টপাস তথ্য জমা করে ক্লাইড স্টোরেজে। দু’টি ম্যানেজার ব্যবহারেরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে তবে দু’টি সেবাই আপাত দৃষ্টিতে নিরাপদ।
চালু রাখুন ফায়ারওয়াল
বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেমেই ইনকামিং ও আউটগোয়িং সংযোগে নজর রাখে ফায়ারওয়াল। ফায়ারওয়াল সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে না পারলেও এটি সবসময় চালু রাখা প্রয়োজন।
উইন্ডোজ ডিভাইসের ক্ষেত্রে  ফায়ারওয়াল সেটিংসগুলো থাকে কন্ট্রোল প্যানেলের সিস্টেম অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশনে। সেখানে উইন্ডোজ ফায়ারওয়ালে ক্লিক করে চালু করে দিন উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল।
ব্যবহার করুন অ্যান্টিভাইরাস
সবসময় ব্যবহার করুন অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এটি নিয়মিত আপডেট করতেও ভুলবেন না। আপনার নেটওয়ার্ক সিস্টেম অথবা ডিভাইসে কোনো ক্ষতিকর কন্টেন্ট, ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস অনুপ্রবেশ করলে অ্যান্টিভাইরাসটিই জানিয়ে দিতে পারে প্রথম সাবধানবাণী।

No comments:

Post a Comment