Saturday 10 September 2016

পিসির স্টার্টআপ প্রসেসের গতি যেভাবে বাড়াবেন

যখন টিভির সুইচ অন করা হয়, তখন ঈষৎ কেঁপে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে জীবন্ত হয়ে ওঠে টিভি। একইভাবে মোবাইল অন করার সাথে সাথে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কল করার জন্য প্রস্ত্তত হয়।
টিপিক্যাল উইন্ডোজ পিসির ক্ষেত্রে দেখা যায় পাওয়ার বাটনে চাপার পর আরম্ভ হতে বেশ সময় নেয়। কিন্তু কেন এত বেশি সময় নেয় তা সাধারণ পিসি ব্যবহারকারীদের অনেকেরই অজানা। এ সময় পিসি অভ্যন্তরীণভাবে কী কাজ করে, তা সাধারণ ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারে না। আর এ সত্য উপলব্ধিতে এবারের পাঠশালা বিভাগে উপস্থাপন করা হয়েছে পিসির স্টার্টআপ প্রসেসকে ত্বরান্বিত করার কৌশল ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

পিসির স্টার্টআপ প্রসেসের গতি যেভাবে বাড়াবেন

স্টার্টআপ প্রসেস
পিসির সুইচ অন করার পর পিসি বেশ কিছু কাজ সম্পাদন করে, যা সেল্ফ টেস্ট হিসেবে পরিচিত। এক্ষেত্রে মূলত পিসির গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট যেমন প্রসেসর, মেমরি এবং হার্ডডিস্কের উপস্থিতি চেক করে দেখে। এ টেস্টের তথ্য পর্দায় প্রদর্শিত হতে পারে কিংবা ম্যানুফ্যাকচারার লোগোর অন্তরালে লুকানো থাকতে পারে।
এসব কিছু হ্যান্ডেল করা যায় বায়োসের (BIOS-বেসিক ইনপুট/আউটপুট সিস্টেম) মাধ্যমে। এটি পিসিতে বিল্টইন এবং উইন্ডোজের কোনো কিছুই করার নেই এখানে। এটি কমপিউটারকে সক্রিয় করে এবং অপারেটিং সিস্টেমকে রান করানোর জন্য প্রস্ত্তত হয়, যেমন উইন্ডোজ।
এরপর বায়োস অনুসন্ধান করে হার্ডডিস্কের মাস্টার বুট রেকর্ড (MBR)। এটিই হলো পিসির সাথে উইন্ডোজের প্রথম সংযোগ বা কনটাক্ট। যখন মাস্টার বুটে রেকর্ড খুঁজে পায়, তখন ক্ষণস্থায়ীভাবে স্ক্রিন ব্লাঙ্ক হয়। যদি উইন্ডোজ লোড হতে আগেই ব্যর্থ হয় বা F8 ফাংশন কী চাপা হয়, তাহলে বুট মেনু আবির্ভূত হবে এবং উইন্ডোজের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অফার করে, যেমন Safe Mode এবং Last Known Good Configuration.
এরপর উইন্ডোজ কমপিউটারের মেমরিতে প্রয়োজনীয় ফাইল, ড্রাইভার এবং সেটিং লোড করে নেয় এবং এ সময় পর্দায় বা স্ক্রিনে উইন্ডোজের লোগো আবির্ভূত হয়। এ কাজ শেষ হলে ওয়েলকাম স্ক্রিন পর্দায় আবির্ভূত হয় এবং আপনাকে প্রম্পট করা হতে পারে ইউজার অ্যাকাউন্টে লগঅন করার জন্য। অবশ্য এটি নির্ভর করে উইন্ডোজ কিভাবে সেটআপ করা হয়েছে তার ওপর। যেকোনো ইউজার সেটিং অ্যাপ্লাই করা হলে উইন্ডোজ ডেস্কটপ আবির্ভূত হবে।
স্টার্টআপ প্রসেস এখানেই শেষ, তা নয়। যেকোনো প্রোগ্রাম উইন্ডোজের সাথে চালু করার জন্য এ সময় লোড হয়। যখন উইন্ডোজ লোড হয় তখন সত্যি সত্যি কি ঘটে তা দেখতে চাইলে Windows কী চেপে R চাপুন Run ডায়ালগ বক্সকে পর্দায় প্রদর্শনের জন্য। এ অবস্থায় msconfig টাইপ করে এন্টার চাপুন। এতে System Configuration টুল চালু হবে। Boot ট্যাবে (এক্সপির ক্ষেত্রে BOOT.INI) সুইচ করে ‘OS boot information’-এ নির্দিষ্ট করুন। এরপর পিসি রিস্টার্ট করুন।

গতি বাড়ানো
পিসির সুইচ অন করার পর থেকে উইন্ডোজ কার্যক্ষম হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করার মাধ্যমে এ অপেক্ষাকালকে কমানো যায় ব্যাপকভাবে।
প্রথমে উইন্ডোজ ভিস্তা বা ৭-এর প্রোগ্রাম অ্যান্ড ফিচার বা এক্সপির ‘অ্যান্ড অর রিমুভ প্রোগ্রামস’ চালু করুন কন্ট্রোল প্যানেল থেকে। ইনস্টল করা প্রোগ্রামের লিস্ট পরীক্ষা করুন। যে প্রোগ্রামটি আপনার দরকার নেই, যে প্রোগ্রাম আপনি কখনোই ব্যবহার করেন না, তা রিমুভ করুন। উইন্ডোজ স্টার্টআপের সাথে কোনো প্রোগ্রামকে সেট করা থাকলে, সেগুলোকে রিমুভ করলে স্টার্টআপ প্রসেসের গতি বেড়ে যায়।
পরবর্তী ধাপে খেয়াল করে দেখুন, উইন্ডোজের সাথে আর কোন কোন প্রোগ্রাম চালু হয়। এ কাজটি করতে চাইলে Start = All Programs নির্দিষ্ট করে Startup-এ ক্লিক করুন। এক্ষেত্রে লিস্টের কিছু প্রোগ্রাম পিসির জন্য দরকারি হতে পারে, যেমন অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম। অ্যান্টিভাইরাস ছাড়া অন্য প্রোগ্রামকে রিমুভ করা যায়- এতে পিসির ফাংশনালিটিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না।
msconfig টুল ব্যবহার করা যায় প্রোগ্রাম ভিউ ও ডিজ্যাবল করার জন্য যেগুলো উইন্ডোজের সাথে চালু হয়। এজন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ফ্রি টুল Starter.

হার্ডডিস্ক সুশৃঙ্খল করা
ফাইল ফ্র্যাগমেন্টেশন স্টার্টআপ প্রসেসকে ধীরগতি করতে পারে। যেহেতু প্রতিটি স্বতন্ত্র ফাইল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে হার্ডডিস্কজুড়ে থাকে, সুতরাং সেই সব ফাইল খুঁজে লোড করতে প্রচুর সময় নেয়। উইন্ডোজের সাম্প্রতিক ভার্সনের একটি টুল সম্পৃক্ত করেছে, যা এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। এজন্য Start = All Programs = Accessories = System Tools-এ ক্লিক করে Disk Defragmenter-এ ক্লিক করুন ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট প্রসেস চালু করার জন্য।

অ্যাডভান্স টোয়েক
আরো কিছু উপায় রয়েছে যা প্রয়োগ করা হলে উইন্ডোজের লোডিং সময় বেশ কমে যায়। যেমন উইন্ডোজ লোগোকে ডিজ্যাবল করা, যা অপারেটিং সিস্টেম চালু হবার সময় প্রদর্শিত হয়। এই লোগো ডিজ্যাবল করলে লোডিং সময় কয়েক সেকেন্ড কমে যায়। এ কাজটি করার জন্য নিচে বর্ণিত ধাপ অনুসরণ করতে হবে : msconfig টুলের BOOT.INI বা বুট ট্যাব ওপেন করে এক্সপির ক্ষেত্রে ‘/NOGUIBOOT’ বা উইন্ডোজ ভিস্তা এবং ৭-এর ক্ষেত্রে ‘No GUI boot’-এ টিক দিয়ে Ok করুন এবং পিসি রিস্টার্ট করুন।
একই দৃষ্টিকোণ থেকে বায়োস টোয়েক করা যায়, যাতে স্টার্টআপের সময় সাশ্রয় হয়। অবশ্য এ কাজটি নতুন বা অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য উচিত হবে না। বায়োস টোয়েক করার জন্য পিসি রিস্টার্ট করে বায়োস সেটআপ স্ক্রিনে অ্যাক্সেস করার জন্য নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। সাধারণত Delete বা F2 কী চেপে। এবার অ্যারো কী ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত অপশন নেভিগেট করে সিলেক্ট করে এন্টার চাপুন বা বাতিল করার জন্য Escap কী চাপুন বা উপরের লেভেলে চলে যান।
এবার পিসির বুট ডিভাইস সংশ্লিষ্ট অপশনের দিকে খেয়াল করুন বিশেষ করে ‘boot priority’ বা ‘boot order’ ইত্যাদির দিকে। প্রথম ডিভাইস হিসেবে ফ্লপি/সিডি/ডিভিডির পরিবর্তে হার্ডডিস্ককে সেট করুন, যার ফলে বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় সাশ্রয় হবে।
কুইক মেমরি টেস্ট চেক করে দেখুন যেন এনাবল থাকে। এতে আরো কয়েক সেকেন্ড সময় বাঁচবে। এ কাজ শেষ হবার পর বায়োস থেকে বের হয়ে আসুন। এরপর যদি পিসি চালু না হয়, তাহলে বায়োসে অ্যাক্সেস করুন এবং অপশন চেক করে দেখে সেভ করুন ও বায়োস থেকে বের হয়ে আসুন।

No comments:

Post a Comment