Wednesday 8 November 2017

অনলাইনে পণ্য কেনার আগে সাবধান!

বাংলাদেশে ই-কমার্স ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আপাত দৃষ্টিতে যতটা জনপ্রিয় মনে হয় বাস্তবে তার চেয়েও বেশি জনপ্রিয় আমাদের দেশের বর্তমান ই-কমার্স। প্রথম আলোর সূত্রমতে প্রতিবছর দেশে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কেনাবেচা হয় অনলাইনে। ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে বছরে ১৫-২০% হারে। এমন দিনও হয়তো আর খুব বেশি দূরে নেই যেদিন দেশের অন্তত ২০-৩০ ভাগ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করবে।
তবে অনলাইনে কেনাকাটার যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনই রয়েছে বেশ কিছু অসুবিধাও। যা কিনা আপনাকে ফেলতে পারে ভোগান্তিতে, আফসোসে।
যদি এইসব আধুনিক ব্যবস্থায় আপনি অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। না হলে আপনার কষ্টার্জিত টাকা চলে যেতে পারে অন্যের পকেটে! অনলাইনে টাকা লেনেদেনের প্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোক ঠকানোর কারবারও।
এবার দেখে নিন, ঠিক কী কী খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে-
১. এটিএম কার্ড হোক কিংবা নেট ব্যাংকিংয়ের পাসওয়ার্ড, এই দুই ক্ষেত্রেই কখনো নিজের জন্ম তারিখ, প্রিয়জনের জন্মতারিখ, নামের আদ্যাক্ষর বা খুবই চেনা জানা শব্দ-সংখ্যা ব্যবহার করা উচিত নয়।
২. সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা মোবাইল ফোন, নিজের পাসওয়ার্ড কারোর সঙ্গে শেয়ার করবেন না। তিনি যতই আপনার কাছের মানুষ হোন না কেন, পাসওয়ার্ড একমাত্র আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।
৩. অজানা কোনো ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ই-মেল-এর লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। অনেক সময়েই সেগুলিতে স্প্যামওয়্যাল বা ম্যালওয়্যার থাকে, যা আপনার ব্যক্তিগত বহু নথি ও পাসওয়ার্ড চুরি করতে পারে।
৪. ই-মেল মারফত আপনার প্যান ও আধার নম্বর চাওয়া হলে কখনো তার জবাব দেবেন না। জেনে রাখুন, কোনো সরকারি সংস্থা আপনার প্যান, আধার কিংবা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ফোন বা মেল মারফৎ জানতে চায় না।
৫. আপনি যে ই কমার্স সংস্থা থেকে কেনাকাটা করছেন, তাদের ওয়েবসাইট সুরক্ষিত কিনা সেটা আগে জেনে নিতে হবে। না হলে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়তে হবে আপনাকে।
প্রথমেই দেখে নিন, অ্যাড্রেস বারে http-এর পর একটা ‘s’ রয়েছে কিনা। ‘s’ থাকলে সাইটটি সুরক্ষিত। অ্যাড্রেস বারের বাঁ দিকে একটা তালার চিহ্নও থাকবে, তার মানে সেই সাইটটি সুরক্ষিত।
৬. যদি কখনো মনে হয় আপনার অ্যাকাউন্টে অবৈধ লেনদেন হয়েছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চটজলদি খবর দিন পুলিশের সাইবার শাখায়।
৭. পাবলিক ওয়াইফাই বা ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করে ব্যক্তিগত লেনদেন না করাই ভালো। চেষ্টা করুন, নিজস্ব ডিভাইস থেকে লেনদেন করতে।
প্রোডাক্ট এর সঠিক বাজার দর জেনে নিন : চোখের সামনে আমার পছন্দের কোন জিনিস পেলাম আর ধাপ করে সেটা কিনে ফেললাম, বিষয়টা কিন্তু এমন হওয়া উচিৎ হয়। যেহেতু বর্তমানে আমাদের দেশে অনলাইনে কম্পিটিশন তুলনামূলক কম, সেহেতু অনেকেই চাইবে সেটার ফায়দা নিতে। বাজারে আপনি একটা পণ্য যে দামে পাবেন, অনলাইনে হয়তো সেই একই প্রোডাক্ট তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি করছে। সেক্ষেত্রে বাজারের দাম সম্পর্কে জেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে দুইটা দাম কম্পেয়ার করে আপনি কিনতে পারবেন।
সবসময় বিশ্বাসযোগ্য জায়গা থেকে কিনুন : আপনি নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারি হয়ে থাকলে ইতোমধ্যেই আপনি বেশ অনেকগুলো ই-কমার্স ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানেন। সাধারণত যেগুলো থেকে বেশিরভাগ মানুষ কেনাকাটা করে, চেষ্টা করুন সেগুলো থেকেই কিনতে। নতুন নতুন অনেক ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে অনেকেই ভুয়া সাইট খুলে টাকা মেরে দেয়ার পায়তারা করে আছে। আজকেরডিল, এখনি, কায়মুসহ বেশ কিছু বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট আছে যাদের কাছ থেকে নির্দ্বিধায় পণ্য কিনতে পারেন।
রিটার্ন/ রিপ্লেসমেন্ট পলিসি সম্পর্কে জেনে নিন : অনেক সময় এমন হতে পারে যে অনলাইনে আপনি যেমন প্রোডাক্টটি দেখলেন বাস্তবে সেটার সাথে বেশ অমিল রয়েছে। তখন তারা রিটার্ন পলিসি কেমন সেটার উপর ভিত্তি করে টাকা ফেরত পাবেন কিনা সেটা ডিপেন্ড করে। ক্ষেত্রবিশেষে ত্রুটিপূর্ণ প্রোডাক্টও পেতে পারেন। তখন তারা রিফান্ড করবে কিনা অথবা রিপ্লেস্মেন্ট করবে কিনা সেটা তাদের রিটার্ন/রিপ্লেসমেন্ট পলিসির উপর নির্ভর করবে। তাই পণ্য কেনার আগে তাদের রিটার্ন/রিপ্লেসমেন্ট পলিসি কেমন সেটা অবশ্যই অবশ্যই কেনার আগে জেনে নিন।
তাই অনলাইনে পণ্য কেনার আগে এই বিষয়গুলো একটু মাথায় রেখে কিনবেন, তাহলে সেটা আপনার জন্যে ভালো হবে বলেই মনে করি।

No comments:

Post a Comment