দৈনন্দিন জীবনে আমরা ঘড়ি দিয়েই সময়কে বুঝে নেই। কিন্তু সময় তো আর ঘড়ির ওপর
নির্ভর করে চলে না। ঘড়ির কাঁটা থেমে থাকলেও সময় বয়েই চলে। অনেক ক্ষেত্রে
ঘড়ির এক ঘণ্টা পার হলেও আমাদের কাছে মনে হয় যেন এক ঘণ্টার অনেক বেশি সময়
চলে গেছে!
আবার অনেক ক্ষেত্রে এর উল্টোটিও ঘটে। আসলে, সময় ব্যক্তিনিরপেক্ষ একটি জিনিস হলেও আমরা আমাদের মস্তিষ্কের সাহায্যেই সময়কে অনুভব করে থাকি।
ফলে সময় নিয়ে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারণা পেতে হলে শুধু পদার্থবিজ্ঞানের উপর নির্ভর করলেই চলে না। পাশাপাশি শারীরতত্ত্ব, স্নায়ুবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মতো বিষয়ের ওপরও নির্ভর করতে হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিচার করতে গেলে খুব কম কথায় সময় বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করাও বেশ কঠিন। তাই সময়ের সঠিক বিশ্লেষণের জন্য এর ভৌত রূপের(পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে) পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও(শারীরবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে) জানার প্রয়োজন রয়েছে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, সময় কী? তাহলে পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর উত্তর কী হবে? হয়তো বলা যেতে পারে, এটি একটি ভৌত রাশি। কারণ পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনায় যেসব রাশিকে দরকার হয় এবং সেটাকে পরিমাপ করা যায়, তাকে ভৌত রাশি বলা হয়। যেমন তাপমাত্রা। সময়ও তাপমাত্রার মতো একটি ভৌত রাশি।
কিন্তু তাপমাত্রাসহ অন্য সব রাশির সঙ্গে সময়ের একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ভর, তড়িৎ প্রবাহ, দীপন ক্ষমতা ইত্যাদিকে আমরা মাপার পাশাপাশি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ধরতে, ছুঁতে ও অনুভব করতে পারি। যেমন- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতাকে দেখা যায়, স্কেল দিয়ে মাপা যায়। কোনো বস্তুকে হাত দিয়ে তুলে আমরা তার ভর অনুভব করতে পারি। তাপমাত্রা ও তড়িৎ প্রবাহের সংস্পর্শে এসে অনুভব করতে পারি (তাই বলে তড়িৎ প্রবাহ অনুভব করতে যাওয়াটা নিশ্চয় বোকামি হবে!)। অর্থাৎ সব ভৌত রাশিকেই পরিমাপের পাশাপাশি ত্বক, চোখ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা যায়। কিন্তু সময়কে শুধু মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার সাহায্যেই অনুভব করতে হয়। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করার কোনো উপায় নেই। অন্য সব ভৌত রাশির সঙ্গে এখানেই সময়ের পার্থক্য।
সময় যে বয়ে চলেছে এটি আমরা বুঝতে পারি পরিবর্তন বা গতির সাহায্যে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর নিজের অক্ষের ওপর ঘোরার কারণে রাত-দিন হয়। আমরা বুঝতে পারি, সময় বয়ে চলেছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঘড়িতে যে সময় মাপা হয় সেটিও কিন্তু গতির সাহায্যেই।
আদিকালের ঘড়িগুলোতে এই বিষয়টি খুব ভালোমতো বোঝা যেত। সূর্যঘড়িতে ছায়ার পরিবর্তন থেকে সময় মাপা হতো। জলঘড়ি বা বালিঘড়িতেও এই পরিবর্তনের বিষয়টি সরাসরি দেখা যেত। এসব প্রাকৃতিক ঘড়ির পরে আবিষ্কার করা হয় যান্ত্রিক ঘড়ি। এসব ঘড়িতেও কোনো একটি দণ্ড বা দোলকের পর্যায়কালকে ব্যাবহার করেই সময় মাপা হতো।
এরপর আসে আণবিক ঘড়ি। একটি ক্রিস্টাল অণুর কম্পনের হারকে ব্যবহার করে আণবিক ঘড়িতে সময় মাপা হয়। পারমাণবিক ঘড়িতে মাপা হয় পরমাণুর কম্পনের সাহায্যে। এক কথায়, গতি ছাড়া সময়ের প্রবাহকে মাপার কোনো উপায় নেই, এমনকি বোঝারও উপায় নেই।
এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় গতি কী? তাহলেই একটি দার্শনিক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবেন। কারণ কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো বস্তুর যে সরণ হয়, সেটিই তার গতি। অর্থাৎ সময়ের ধারণা ছাড়া গতি পরিমাপের কোনো উপায় নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে- সময়ের ধারণা ছাড়া গতিকে বোঝার উপায় নেই। আবার গতির সাহায্যেই সময়কে বুঝতে হচ্ছে। ফলে গতি ও সময় এই দুটি জিনিসকে এমনিতে খুব সাধারণ জিনিস মনে হলেও এদের মৌলিক রূপ বুঝতে চাইলেই এক রহস্যময় জট পাঁকিয়ে যায়।
সময় যে একটি গোলমেলে জিনিস সেটি কিন্তু বহুকাল আগে থেকেই মানুষের জানা ছিল। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে সেন্ট অগাস্টিন বলেছিলেন, ‘কেউ যদি জিজ্ঞেস করে সময় কী? মনে হয় উত্তর জানি, কিন্তু উত্তর দিতে গেলেই বুঝতে পারি জানি না।’
আবার অনেক ক্ষেত্রে এর উল্টোটিও ঘটে। আসলে, সময় ব্যক্তিনিরপেক্ষ একটি জিনিস হলেও আমরা আমাদের মস্তিষ্কের সাহায্যেই সময়কে অনুভব করে থাকি।
ফলে সময় নিয়ে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারণা পেতে হলে শুধু পদার্থবিজ্ঞানের উপর নির্ভর করলেই চলে না। পাশাপাশি শারীরতত্ত্ব, স্নায়ুবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মতো বিষয়ের ওপরও নির্ভর করতে হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিচার করতে গেলে খুব কম কথায় সময় বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করাও বেশ কঠিন। তাই সময়ের সঠিক বিশ্লেষণের জন্য এর ভৌত রূপের(পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে) পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও(শারীরবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে) জানার প্রয়োজন রয়েছে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, সময় কী? তাহলে পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর উত্তর কী হবে? হয়তো বলা যেতে পারে, এটি একটি ভৌত রাশি। কারণ পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনায় যেসব রাশিকে দরকার হয় এবং সেটাকে পরিমাপ করা যায়, তাকে ভৌত রাশি বলা হয়। যেমন তাপমাত্রা। সময়ও তাপমাত্রার মতো একটি ভৌত রাশি।
কিন্তু তাপমাত্রাসহ অন্য সব রাশির সঙ্গে সময়ের একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ভর, তড়িৎ প্রবাহ, দীপন ক্ষমতা ইত্যাদিকে আমরা মাপার পাশাপাশি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ধরতে, ছুঁতে ও অনুভব করতে পারি। যেমন- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতাকে দেখা যায়, স্কেল দিয়ে মাপা যায়। কোনো বস্তুকে হাত দিয়ে তুলে আমরা তার ভর অনুভব করতে পারি। তাপমাত্রা ও তড়িৎ প্রবাহের সংস্পর্শে এসে অনুভব করতে পারি (তাই বলে তড়িৎ প্রবাহ অনুভব করতে যাওয়াটা নিশ্চয় বোকামি হবে!)। অর্থাৎ সব ভৌত রাশিকেই পরিমাপের পাশাপাশি ত্বক, চোখ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা যায়। কিন্তু সময়কে শুধু মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার সাহায্যেই অনুভব করতে হয়। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করার কোনো উপায় নেই। অন্য সব ভৌত রাশির সঙ্গে এখানেই সময়ের পার্থক্য।
সময় যে বয়ে চলেছে এটি আমরা বুঝতে পারি পরিবর্তন বা গতির সাহায্যে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর নিজের অক্ষের ওপর ঘোরার কারণে রাত-দিন হয়। আমরা বুঝতে পারি, সময় বয়ে চলেছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঘড়িতে যে সময় মাপা হয় সেটিও কিন্তু গতির সাহায্যেই।
আদিকালের ঘড়িগুলোতে এই বিষয়টি খুব ভালোমতো বোঝা যেত। সূর্যঘড়িতে ছায়ার পরিবর্তন থেকে সময় মাপা হতো। জলঘড়ি বা বালিঘড়িতেও এই পরিবর্তনের বিষয়টি সরাসরি দেখা যেত। এসব প্রাকৃতিক ঘড়ির পরে আবিষ্কার করা হয় যান্ত্রিক ঘড়ি। এসব ঘড়িতেও কোনো একটি দণ্ড বা দোলকের পর্যায়কালকে ব্যাবহার করেই সময় মাপা হতো।
এরপর আসে আণবিক ঘড়ি। একটি ক্রিস্টাল অণুর কম্পনের হারকে ব্যবহার করে আণবিক ঘড়িতে সময় মাপা হয়। পারমাণবিক ঘড়িতে মাপা হয় পরমাণুর কম্পনের সাহায্যে। এক কথায়, গতি ছাড়া সময়ের প্রবাহকে মাপার কোনো উপায় নেই, এমনকি বোঝারও উপায় নেই।
এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় গতি কী? তাহলেই একটি দার্শনিক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবেন। কারণ কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো বস্তুর যে সরণ হয়, সেটিই তার গতি। অর্থাৎ সময়ের ধারণা ছাড়া গতি পরিমাপের কোনো উপায় নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে- সময়ের ধারণা ছাড়া গতিকে বোঝার উপায় নেই। আবার গতির সাহায্যেই সময়কে বুঝতে হচ্ছে। ফলে গতি ও সময় এই দুটি জিনিসকে এমনিতে খুব সাধারণ জিনিস মনে হলেও এদের মৌলিক রূপ বুঝতে চাইলেই এক রহস্যময় জট পাঁকিয়ে যায়।
সময় যে একটি গোলমেলে জিনিস সেটি কিন্তু বহুকাল আগে থেকেই মানুষের জানা ছিল। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে সেন্ট অগাস্টিন বলেছিলেন, ‘কেউ যদি জিজ্ঞেস করে সময় কী? মনে হয় উত্তর জানি, কিন্তু উত্তর দিতে গেলেই বুঝতে পারি জানি না।’
No comments:
Post a Comment